এক আচার্য্যের পদের গাম্ভীর্য্য!
- The Symbol of Faith
- Jul 31, 2024
- 2 min read
শ্রীশ্রীমদ ভক্তি বিজ্ঞান ভারতী গোস্বামী মহারাজ উল্লেখ করতেন, “প্রত্যেক তাৎপর্য্যপূর্ণ কার্য্য সম্পাদনের আগে, গুরু মহারাজ প্রথমে একান্তে বিভিন্ন ভক্তদের মতামত জানতে,তাদের আহ্বান করতেন এবং পরে এই বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত রায় প্রকাশ করতেন। একবার, গুরু মহারাজ আমাকে ডেকে বললেন, "আমার প্রস্থানের পর শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠের চালনা যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে হতে থাকে, সেই লক্ষ্যে, আমার গুরুভ্রাতা শ্রী ভক্তি বিচার যাযাবর মহারাজ চারজনকে [উত্তরাধিকারী] নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, তার মতে, তিনি এমন কোনো নির্দিষ্ট যোগ্য ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পারেন না যার আদেশ সবাই মেনে চলবে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে তিনি নিজেই নিজের মঠের জন্য চারজন আচার্য্য নিযুক্ত করতে চলেছেন। আমি এই বিষয়ে অন্যান্য ভক্তদের মতামত চেয়েছি এবং শুনেছি। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?"
আমি উত্তর দিলাম, “যদিও আমি এই বিষয়ে কোনো মতামত দিতে অযোগ্য, এবং তাছাড়া, আপনি এখনও অন্যদের মতামত প্রকাশ করেননি যাদের সাথে আপনি ইতিমধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন, এমনকি এখনও, আমার মতে শুধুু একজন আচার্য্য নিয়োগ করা, আগামী কিছু সময়ের জন্য শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার অনুমতি দেবে। অন্যথায়, আমি মনে করি যে এক স্থানে একসাথে বসবাসকারী চার-আচার্য্যের শিষ্যদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত্য বিরোধ দেখা দেবে।"
গুরু মহারাজ আরও জিজ্ঞাসা করলেন, "আমি [এই পৃথিবী থেকে] চলে যাবার পর আপনি কি আচার্য্যের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন?"
আমি উত্তর দিয়েছিলাম, “আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করব কি না তা নিয়ে কখনও ভাবিনি। কিন্তু একটা কথা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আমি এখনও জীবের প্রতি শ্রীপ্রহ্লাদ মহারাজ বা শ্রীবাসুদেব দত্তের মতো এতটা স্নেহবোধ করিনি যে তাদের উদ্ধারের জন্য আমি নরকে যেতে প্রস্তুত হব। এ কারণে আমি বর্তমানে এই দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নই।”
"দ্বিতীয়তঃ, আমি আপনার মুুখপদ্ম হইতে শ্রবণ করেছি যে ভক্তি-লতা যখন ধীরে-ধীরে বৃদ্ধি পায়, তখন এটি শ্রীকৃষ্ণে-পাদপদ্মের আশ্রয় নেয়, যাকে একটি কল্প-বৃক্ষের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তারপর, শুধুমাত্র এই কল্পবৃক্ষের সুরক্ষায়, সেই লতায় প্রেমফল দেখা দিতে শুরু করে। সাধক তখন ব্যক্তিগতভাবে এই পরিপক্ক ফলগুলিকে আস্বাদন করে। কিন্তু সেই ফলগুলির সংখ্যা বাড়ার সাথে-সাথে এমন একটি সময় আসে যখন সাধক একা সেগুলি আস্বাদন করতে অক্ষম হয়ে যান এবং অপচয়ের ভয়ে, সেই প্রেমফলগুলি বিতরণ করার ইচ্ছা তার অন্তরে প্রকাশ পায়। আমি এখনও এই উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হইনি এবং তাই আমি বর্তমানে এই আচার্য্যের সেবা গ্রহণে খুব বেশি উৎসাহী নই।"
শাস্ত্র পড়াইয়া সবে এই কর্ম করে।
শ্রোতার সহিত যম-পাশে ডুবি’ মরে।।
শ্রীচৈতন্য-ভাগবত (আদি-খণ্ড ২.৬৮)
একজন ব্যক্তি যদি শাস্ত্রের তাৎপর্য্য না বুুঝে ও জড় কর্ম্মের ফল না জেনে জড় কর্ম্ম করতঃ শাস্ত্র শিক্ষা দেয় তবে মৃত্যুর রাজা, যমরাজ কর্তৃক গুরু ও শিষ্য উভয়েই দন্ডিত হবেন।
আমার কথা শুনে, গুরু মহারাজ উত্তর দিলেন, "এই বিষয়ে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জনের জন্য, আপনাকে শ্রীহরি-ভক্তি-বিলাসের দ্বিতীয় খন্ডের সেই অংশটি মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করা উচিত এবং চিন্তা করা উচিত যা একজন গুরু এবং শিষ্যের লক্ষণগুলি বর্ণনা করে। সেইসাথে শ্রীবেদান্ত-সূত্রের প্রাসঙ্গিক অংশগুলিও। যখন প্রয়োজন দেখা দেবে, তখন আপনাকে আচার্য্যের ভূমিকা গ্রহণ করতেই হবে। পূর্ব্বে, আমারও গুরু-আচার্য্য হওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করবার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তবে সময়ের প্রয়োজনে এবং সেবার সু্ত্রে আমাকেও এই ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে।”
গৌর হরি হরি বোল















Comments