চেতনার জাগরণ? নাকি সমালোচনার জবাব? (শ্রীল সচ্চীদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় কি নিত্যসিদ্ধ ভগবৎ পার্ষদ অথবা সাধন সিদ্ধ?) —পর্ব্ব- ৩
- The Symbol of Faith
- Jul 11
- 3 min read
Updated: Jul 17
প্রকাশনা তিথি : বৃহস্পতিবার (কারণোদশায়ী), কৃষ্ণ-সপ্তমী (দামোদর), ৩২ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রীধর ৫৩৯ গৌরাব্দ

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
চেতনার জাগরণ? নাকি সমালোচনার জবাব? (শ্রীল সচ্চীদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় কি নিত্যসিদ্ধ ভগবৎ পার্ষদ অথবা সাধন সিদ্ধ?)— পর্ব্ব- ৩
প্রবন্ধকর্ত্তা : শ্রীশ্রীল শ্যাম দাস বাবা মহারাজ
বিঃ দ্রঃ পুর্ব্ব সংখ্যায় যথাসম্ভব শ্রীগুরু-গৌড়ীয়ের অসমোর্দ্ধ বিচার প্রকাশ করা হয়েছিল। বর্ত্তমান বিচারগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিচার করে দেখবেন — এই স্বনির্ব্বন্ধ অনুরোধ রাখি।
শ্রীল সচ্চীদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুরও বাহ্য দৃষ্টিতে একজন জড় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন কিন্তু তাঁর অলৌকিক ক্রিয়াকর্ম্ম বহুলরূপে প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল। দৃষ্টান্ত স্বরূপ সামান্য কিছু দিকদর্শন করা গেল যথা— শ্রীক্ষেত্রে শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের সেবা পরিচালনারূপ কার্য্যরত অবস্থায় যখন তিঁনি প্রত্যহ শ্রীমন্মহাপ্রভুর চরণচিহ্ন মন্দিরের সংলগ্ন স্থানে নাম সঙ্কীর্ত্তন ও হরিকথা চালিয়ে যেতেন, তখন কোন একদিন কোন এক বাবাজী মহাত্মা ( ? ) তাঁকে কটাক্ষ করে বলেন– “তিলক মালার কোন বালাই নেই– কেবল বাহ্য আরম্বর মাত্র।” ঠিক সেই সময় থেকে তা’র (বাবাজি মহাত্মার) ভজনের সর্ব্বনাশ হয়। পরে যখন তা’র উপলব্ধি হয় যে, তিনি ‘শ্রীকেদারনাথ দত্ত’ নামক সেই মহান ভক্তের চরণে অপরাধ করেছেন, তখন তিনি ক্ষমা প্রার্থনা মুখে স্বীকার করেন যে,— “আপনি নিত্য সিদ্ধ ভক্ত (বা ভগবৎ-পার্ষদ), আমি আপনার দেহে ভক্তি-চিহ্ন অর্থাৎ তিলক-মালাদি না দেখে নিন্দা করে নিজের সর্ব্বনাশ করে ফেলেছি, আপনি আমায় দয়া করে ক্ষমা করবেন, নচেৎ রেহাই নেই।” এই শুনে শ্রীল সচ্চীদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বলেন যে,– “সত্যিই তো আমার গুরু গ্রহণ হয় নাই, সেই কারণেই আপনি আমার তিলক মালা কিছু দেখতে পান না।” শেষে– যদিও তিঁনি কোন এক তথাকথিত গুরুচরণ আশ্রয়ের লীলা করেন, তথাপি তা কিন্তু তা’কেই (সেই তথা কথিত গুরুকে) উদ্ধার কল্পেই তাঁর ঐ গুরু-গ্রহণ লীলা, ঠিক যেমন শ্রীমন্মহাপ্রভুর গুরু-গ্রহণ এবং সন্ন্যাস মন্ত্র-গ্রহণ লীলা। মাত্র সাতবর্ষ বয়সে যখন শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, শ্রীল বিমলা প্রসাদ (প্রভুপাদ) প্রভুকে নাড়াইলে (বর্ত্তমান বাংলাদেশের, যশোরে) গুরুপীঠে নিয়ে যান– তখন সেইখানে সংঘটিত এক অদ্ভুত অলৌকিক ঘটনা প্রমাণ দেয় যে– শ্রীল ঠাকুর নিত্যসিদ্ধ ভগবৎ-পার্ষদ; অর্থাৎ যখন,— যখন ঐ সহজিয়া তথাকথিত গুরু শ্রীল ঠাকুরের মস্তকে পদস্থাপন করতে প্রয়াসি হন, তখন সিংহ-নাদে ওই শিশু চিৎকার করে তাকে থামিয়ে দেন, বলে উঠে যে— “আপনি কি নিজেকে অধিকারীজন বলে মনে করেন— শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের মস্তকে পদার্পণ করতে?” ঐরূপ বহু বহু অদ্ভুত অলৌকিক লীলাগুলো প্রমাণ করে তাঁর নিত্য পার্ষদত্ব।
যিঁনি নদীয়া প্রকাশ (অর্থাৎ শ্রীনদিয়া-বিহারী হরি– শ্রীগৌরাঙ্গদেবের ধাম-নাম আবির্ভাব স্থলী প্রকাশ করে সমগ্র জগৎবাসীকে নিত্য-মঙ্গলের মার্গ প্রদর্শন করেন) রূপেসু বিখ্যাত হন, যিঁনি শ্রীগুরু (শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদকে প্রকাশ করেন) প্রসাদ সমগ্র জগতবাসীকে পাইয়ে দেন, যিঁনি অপ্রাকৃত শব্দব্রহ্মরূপ শাস্ত্র গ্রন্থ প্রণয়ন করে সমগ্র বিশ্বে সপ্তম গোস্বামী নামে পরিচিতি লাভ করেন, যিঁনি শ্রীনামের রহস্যময় যবনিকা উন্মোচন করেন। যিনি শ্রীরূপানুগবর পদবীতে বাস্তবিক আসীন ছিলেন, তিঁনি কি নিত্য সিদ্ধ ভগবৎ পার্ষদ না হয়ে পারেন? যখন তিঁনি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর শ্রীবৃন্দাবন ধামে গিয়ে হরিভজনের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখন কার্য্যানুরোধে তারকেশ্বরে (হুগলি জেলায়) গিয়ে রাত্রিকালে স্বপ্নে সদাশিব তারকেশ্বরের দর্শন ও আদেশ প্রাপ্ত হন। মহাদেব ভোলেনাথ বলেন যে,— “তুমি শ্রীবৃন্দাবন গমনের পরিকল্পনায় ব্যস্ত, কিন্তু তোমার হাতের কাছে সেই গুপ্ত-বৃন্দাবন গৌর ধামের সেবা তুমি ছাড়া আর কে করবে?” বিশেষভাবে তখন থেকে তিঁনি উঠে পড়ে লেগে যান শ্রীনদীয়া বিহারী হরির ধাম-নামাদি প্রকাশরূপ সেবায়। নিত্যসিদ্ধ মহাত্মা শ্রীল বৈষ্ণব সার্ব্বভৌম জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজ স্বয়ং শ্রীগৌরাঙ্গের আবির্ভাব ভূমিতে– শ্রীধাম মায়াপুরে, ১২৫ বৎসর বয়সে নৃত্য-কীর্ত্তনমুখে সুদৃঢ়রূপে নির্দ্দেশ করেন ঐ ভূমির সত্যতা বিষয়ে। শ্রীল ঠাকুর মহাশয়ও নিজে শ্রীরাণীচড়া থেকে রাত্রিকালে বহুবার নাম ভজনরত অবস্থায় প্রচুর-প্রচুর দিব্য জ্যোতির্ম্ময় আলোক দর্শন করে সেই স্থানই শ্রীগৌরাঙ্গদেবের আবির্ভাবস্থল হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং সেই স্থানেই শ্রীযোগপীঠ শ্রীমন্দির প্রকাশ করেন। শ্রীভগবতী মা একদা শ্রীধাম নবদ্বীপের রাণীচড়ায় সিদ্ধ মহাত্মা শ্রীল গৌর কিশোর দাস বাবার দর্শনে এলে– বাবা বলেন যে,— আপনি কি নবদ্বীপে ঠাকুর দর্শন করতে এসেছেন বা কেনাকাটি করতে এসেছেন ? যখন উত্তরে শুনতে পান যে– তিঁনি (শ্রীভগবতী মা) তাঁরই দর্শন লাভের জন্য এতদূর এসেছেন কলিকাতার রামবাগান থেকে, তখন শ্রীল বাবাজী মহাশয় বলেন– আপনার ঘরে যে নিত্যসিদ্ধ ভগবৎ-পার্ষদ (শ্রীগৌরাঙ্গ-পার্ষদ) রয়েছে। তাঁকে ছেড়ে দিয়ে এতদূর কেন এলেন? এ সকল অসংখ্য প্রমাণযোগে প্রমাণিত হয় তাঁর নিত্যপার্ষদত্ব, তথাপি যদি তাঁর পূর্ব্বকৃত কিছু বাহ্য অসামঞ্জস্য ক্রিয়া-কর্ম্ম দর্শনে তাঁকে জড়বিচারের কাঠগড়ার আসামী নির্ণয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, সে ক্ষেত্রে নিশ্চিত পরিমানে আপনারা বঞ্চিত হবেন।
(ক্রমশঃ প্রকাশ্য)
Comments