top of page

চেতনার জাগরণ? নাকি সমালোচনার জবাব? (শ্রীল সচ্চীদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় কি নিত্যসিদ্ধ ভগবৎ পার্ষদ অথবা সাধন সিদ্ধ?) —পর্ব্ব-১

  • Writer: The Symbol of Faith
    The Symbol of Faith
  • Jul 9
  • 3 min read

Updated: Jul 13

প্রকাশনা তিথি : সোমবার (সঙ্কর্ষণ), ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রীধর ৫৩৯ গৌরাব্দ


ree

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ


চেতনার জাগরণ? নাকি সমালোচনার জবাব?   

(শ্রীল সচ্চীদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় কি নিত্যসিদ্ধ ভগবৎ পার্ষদ অথবা সাধন সিদ্ধ?) পর্ব্ব-১


প্রবন্ধকর্ত্তা  : শ্রীশ্রীল শ্যাম দাস বাবা মহারাজ


শ্রীমদ্ভাগবত প্রমাণে দেখা যায় যে,—

            যচ্ছক্তয়ো বদতাং বাদিনাম বৈ

            বিবাদ সংবাদ ভুবো ভবন্তি।

            কুর্ব্বন্তি চৈষাং মুহুরাত্ম মোহং

            তস্মৈঃ নমোহনন্ত গুণায় ভুম্নে॥ (ভাঃ ৬|৪|৩১)

অর্থাৎ, যাঁর শক্তিতে শক্তিমান হয়ে তার্কিকগণের তর্কের শেষ নেই, আর এতে তারা নিজেরাই মুহুর্মুহু মোহগ্রস্ত হয় যাঁ’র মায়ায়, সেই অনন্ত-গুন-স্বরূপ ভুমা পুরুষকে আমি নমস্কার করি।

গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ পরমহংস জগদ্গুরু জানিয়েছেন যে,— “যে মুহূর্ত্তে আমাদের রক্ষাকর্ত্তা থাকবে না সেই মুহূর্ত্তেই আমাদের পারিপার্শ্বিক সকল বস্তু (বা ব্যক্তি) শত্রু হয়ে আমাদের আক্রমণ করতে উদ্ধত হবে, প্রকৃত সাধুর  হরিকথাই আমাদের রক্ষাকর্ত্তা।” তিঁনি আরও জানিয়েছেন যে,— “সত্য জানিবা মাত্রই তা’তে আমাদের নিষ্ঠাযুক্ত হওয়া উচিত।” আমাদের জীবনের সময়, যার যতটুকু আছে তা’র এক মুহূর্ত্তও বিষয় কার্য্যে নিযুক্ত না করে হরিভজনে নিযুক্ত করা উচিত। নির্ব্বীশেষবাদিগণ বৈষ্ণবের স্বরূপ দর্শন করবার পরিবর্ত্তে তাঁর বিশ্বরূপ দেখে বঞ্চিত হন। নির্ব্বীশেষবাদী বৈষ্ণবের বিশ্বরূপ দেখতে গিয়ে নির্ম্মল বৈষ্ণবে পাপাচার দর্শন করে, আর প্রাকৃত সহজিয়া নামবলে পাপাচারী অপরাধীকে বৈষ্ণব বলে থাকে; কিন্তু শুদ্ধভক্তের বিচার এইরূপ যে,— “ভক্তের বৈগুণ্য অর্থাৎ পাপাচার কখনই সম্ভব নয়; যদি কদাচিৎ সেইরূপ আচার দেখা যায়, তদ্বিষয়ে দুই প্রকার চিন্তা করা উচিত— মহাপুরুষ ভক্তের দৈবক্রমে একটি পাপকার্য্য হয়েছে, তা কখনই স্থায়ী হবে না; অথবা পূর্ব্ব পাপাভাস ভাবোদয়ে বিনষ্ট হতে কিছু কাল অতিবাহিত হচ্ছে।  অতিশীঘ্রই তা বিনষ্ট হয়ে যাবে। এইরূপ মনে করে ভক্তের সামান্য দোষ দর্শন করবে না; সেই সেই স্থলে দোষ দর্শন করলে নাম অপরাধ হবে। নৃসিংহ পুরাণে— 

                  ভগবতি চ হরাবনন্যচেতা   

                  ভৃশমলিনোহপি বিরাজতে মনুষ্যঃ। 

                  ন হি শশকলুষচ্ছবিঃ কদাচিৎ 

                  তিমিরপরো ভবতামুপৈতি চন্দ্রঃ ॥ (নৃসিংহ পূরাণ বচন)

অর্থাৎ, যেরূপ চন্দ্র শশাঙ্কযুক্ত হলেও কখনই তিমিরাবৃত হন না,  তদ্রূপ ভগবান হরিতে অনন্য চেতা মানব অতিশয় মলিন হয়েও অর্থাৎ সুদুরাচার হলেও শোভা পেতে থাকেন— এই উপদেশ দ্বারা এরূপ বুঝবে না যে,– ভক্তগণ নিরন্তর পাপ করেন; বস্তুতঃ ভক্তি-নিষ্ঠা জন্মিলে পাপ বাসনা থাকে না; কিন্তু যে পর্য্যন্ত শরীর থাকে, সে পর্য্যন্ত ঘটনাক্রমে কোন পাপ এসে উপস্থিত হতে পারে; ভজন বিগ্রহ জ্বলন্ত অগ্নির ন্যায় সেই পাপকে তৎক্ষণাৎ ভস্ম্যসাৎ করেন বা বরং ভবিষ্যতে যাতে সেইরূপ পাপের আর উৎপত্তি না হয়,‌ তদ্বিষয়ে সাবধান হন।” (জৈবধর্ম্ম) 

কিন্তু এই বিচার ভজন পরায়ণ বৈষ্ণব সম্বন্ধে— শুদ্ধ ভক্তের বিচার। কিন্তু নিত্য-সিদ্ধ শ্রীগুরুপাদপদ্মের সম্বন্ধে এইরূপ বিচার নয়। গুরুদেব বা আচার্য্যগণ পূর্ব্বে পতিত ছিলেন ও পরে পতিত হতে পারেন বা হয়েছেন,— এইরূপ বিচার নির্ব্বিশেষবাদীর বিচার। ব্রহ্মা, শিব, ব্যাস, বিল্বমঙ্গল, ভক্তাঙ্ঘ্রিরেণু প্রভৃতি জগদ্গুরু আচার্য্যগণ পূর্ব্বে পতিত ছিলেন, পরে সাধু হয়েছেন,— নির্ব্বিশেষবাদী ও প্রাকৃত-সহজিয়া এইরূপ বিচার করে থাকেন‌। নির্ব্বিশেষবাদীগণ বলেন যে,— বাল্মিকী পূর্ব্বে দস্যু ছিলেন, পরে বৈষ্ণবাচার্য্য হয়েছেন; তুলসীদাস পূর্ব্বে অত্যন্ত স্ত্রৈন ছিলেন, পরে রামায়েৎ সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ আচার্য্য হয়েছিলেন; বিল্বমঙ্গল ঠাকুর, চন্ডীদাস ও বিদ্যাপতি অবৈধ জীবন যাপন করেও বৈষ্ণবাগ্রগণ্য হয়েছিলেন। এই জাতীয় যাবতীয় বিচারই স্ব-স্ব রিপুচঞ্চল্যোত্থ পাষন্ডতা।

নির্বিশেষ চিত্তবৃত্তি বিশিষ্ট কোন গোস্বামী নামধারী— জগদ্গুরু শ্রীল সচ্চিদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় কে উপদেশ দেবার ধৃষ্টতা করেছিল। পার্ষদ-দেহ সম্বন্ধে সৎ-সিদ্ধান্ত এই যে,— স্বরূপ শক্তি বৈভবের অন্তর্গত হয়ে গেলে তাঁর আর তটস্থ শক্তিপ্রসূত জীবত্ব-দর্শন সঙ্গত হয় না।

দাসীগর্ভজাত ব্যক্তি যখন পার্ষদ-দেহ প্রাপ্ত হন তখন তিঁনি স্বরূপ শক্তির বৈভবের অন্তর্গত রূপে প্রকাশিত। সাধন-সিদ্ধ নারদ সম্বন্ধে এ কথা প্রয়োজ্য।

নিত্যসিদ্ধ বৈকুণ্ঠ পার্ষদ সম্বন্ধে জয়-বিজয়ের প্রসঙ্গে বক্তব্য এই যে,— ভগবদিচ্ছায়– তা’দের বাহ্য পতন লীলায় দেখা যায় যে,— তা’দের অসুর-যোনি প্রাপ্তি হয়। প্রথম কথা এই যে,— নিত্য-সিদ্ধ বৈকুন্ঠ-পর্ষদগণের পতন আদৌ সম্ভব না। কারণ সেক্ষেত্রে ভগবৎ-বাক্যের সত্যতা থাকে না। শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতাতে সাক্ষাৎ বুঝবে  শ্রীভগবৎ বচন—

ন তদ্ভাসয়তে সূর্য্যো ন শশাংকো ন পাবকঃ।

যদ্গত্বা ন নিবর্ত্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম ॥৬॥  (গীতা ১৫.৬)

অর্থাৎ, যেই স্থান প্রাপ্ত হইয়া (প্রপন্ন জনগণ) তাঁহা হইতে আর প্রত্যাবর্ত্তন করেন না—তাঁহাই আমার পরম (সর্ব্বপ্রকাশক) ধাম। তাঁহাকে (সেই আমার ধাম কে ) সূর্য্য, চন্দ্র ও অগ্নি ইহাদের কেহই প্রকাশ করিতে পারে না॥ 

অর্থাৎ সেই বৈকুণ্ঠ দেহই অতীব সুক্ষ্ম আকার‌ ধারনপূর্ব্বক দিতি মাতার গর্ভে প্রবিষ্ট হয়ে হিরন্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু রূপে আবির্ভাব নিয়ে ভগবদ্দিচ্ছা পূর্ত্তিরূপ বীর রস আস্বাদন করিয়েছিলেন। ভগবদ্বিদ্বেষরূপ আচরণে প্রচুর হিংসা-বিদ্বেষ তা’দের জীবনে দেখা যায়। তা’রাই আবার রাবণ ও কুম্ভকর্ণ রূপে জন্মগ্রহণ করেন। আবার তা’রাই শিশুপাল ও দন্তবক্ররূপে আবির্ভূত হন; শেষে ভগদ্ধামে ফিরে যান। হয়তো মহান-ভগবৎ-পার্ষদ টীকাকারগণের এই বিচার আপনারা শুনে থাকবেন। কিন্তু নিত্য ভগবৎ-পার্ষদের ঐরূপ বাহ্য লীলাও কি আপনারা মেনে নিতে রাজী হবেন? 

                                                                   

   (ধারাবাহিকভাবে ক্রমশঃ প্রকাশ্য)







 
 
 

Comments


WhatsApp Image 2025-04-24 at 09.04_edite
  • Instagram
  • Facebook
  • Youtube
  • Whatsapp
  • Telegram
  • Dribbble
  • TikTok
WhatsApp Image 2025-04-24 at 09.05_edite

@২০২৪ চেতনার জাগরণ - এর দ্বারা

bottom of page