top of page

চেতনার জাগরণ? নাকি সমালোচনার জবাব? (শ্রীল সচ্চীদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় কি নিত্যসিদ্ধ ভগবৎ পার্ষদ অথবা সাধন সিদ্ধ?) — পর্ব্ব-৪

  • Writer: The Symbol of Faith
    The Symbol of Faith
  • Jul 17
  • 4 min read

প্রকাশনা তিথি : শুক্রবার (গর্ভোদশায়ী), কৃষ্ণ-অষ্টমী (হৃষীকেশ), ১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রীধর ৫৩৯ গৌরাব্দ


ree

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ


চেতনার জাগরণ? নাকি সমালোচনার জবাব? 

(শ্রীল সচ্চীদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় কি নিত্যসিদ্ধ ভগবৎ পার্ষদ অথবা সাধন সিদ্ধ?)

পর্ব্ব-৪


প্রবন্ধকর্ত্তা  : শ্রীশ্রীল শ্যাম দাস বাবা মহারাজ


বিঃ দ্রঃ পুর্ব্ব সংখ্যায় যথাসম্ভব শ্রীগুরু-গৌড়ীয়ের অসমোর্দ্ধ বিচার প্রকাশ করা হয়েছিল। বর্ত্তমান বিচারগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিচার করে দেখবেন — এই স্বনির্ব্বন্ধ অনুরোধ রাখি। 


নিম্নে উদ্ধৃত কিছু প্রমাণাবলী হয়তো আপনাদের ভুল সংশোধনে সহায়ক হতে পারে, এই বিচারে কিছু কিছু শাস্ত্রীয় দিগ্দর্শন দেওয়া গেল .

শ্রীল রূপপাদ নির্নীত বিচারে দেখা যায় যে,—


দৃষ্টৈঃ স্বভাবজনিতৈর্বপুষশ দোষৈঃ 

ন প্রাকৃতত্বমিহ ভক্তজনস্য পশ্যেৎ।

গঙ্গান্তসাং ন খলু বুদ বুদ ফেনপঙ্কৈ-

র্ব্রহ্মদ্রবত্ত্বমপগচ্ছতি নীরধর্মৈঃ ॥৬॥ (শ্রীরূপোপদেশামৃত, শ্লোকে- ৬)


অনুবাদ— বৈষ্ণব-তত্ত্ব প্রাকৃত ধারণার মধ্যে বিচার্য্য নহে। সাধারণত বাহ্যিক দৃষ্টি দিয়া আমরা কোন ব্যক্তিকে জানিতে চাই। কিন্তু ভগবদ্ভক্তকে জন্মগত দৈহিক কদর্য্যতা বা সৌন্দর্য্য বা সুস্থতা বা অসুস্থতা, মধুরভাষী বা কর্কষতা এইসব দিয়া বৈষ্ণবত্ত্বের হানিত্ব বা গৌরবত্ব বিচার করিতে হয় না, কৃষ্ণ নিষ্ঠাই তাঁহার মুখ্য গুণ। কৃষ্ণে নিবেদিতাত্ম ব্যক্তির বাহ্যিক দোষ-গুণ তাঁহার বৈষ্ণবত্ত্বের বা অবৈষ্ণবত্ত্বের পরিচিতি নহে। উপমাক্ষেত্রে তাই বলা হইয়াছে গঙ্গাদেবী পতিত-পাবনী কিন্তু বুদবুদ, ফেন, পঙ্ক, ঐ গঙ্গাজলের ‘ব্রহ্ম-দ্রব-ধর্ম্ম' অর্থাৎ পতিত-পাবনত্ত্ব কোন প্রকারে হানি করিতে পারে না। তবে তাই বলিয়া সহজিয়া দৃষ্টি দিয়া অসচ্চরিত্র যোষিৎ সঙ্গী, নাম-অপরাধী, বৈষ্ণব-অপরাধী এই সমস্ত কদাচার আশ্রয়কারী অবৈষ্ণবের, বৈষ্ণব বলিয়া তাহার সঙ্গ করিতে হয় না।


যাঁকে স্বর্গরাজ ইন্দ্র মহারাজ স্বয়ং কোন বিশেষ বিষয়ের বিচারে সুবিচার পাওয়ার জন্য স্বর্গে নিয়ে যান, আজ কিনা তাঁর বিচার আমরা করতে বসেছি। বাহ্য কর্ম্ম বিরতির পর শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের থেকে ভেক গ্রহণের সময় থেকে শ্রীল ঠাকুর নিরন্তর শ্রীগোদ্রুমদ্বীপে, স্বীয় স্বানন্দ সুখদ কুঞ্জে, শ্রীশ্রীগৌর গদাধর বিগ্রহের সম্মুখে নাম-ভজনে ডুবে থাকতেন কিন্তু তৎপূর্ব্বে তাঁর নিয়ম ছিল প্রত্যহ অফিস ফেরত হয়ে কিছু জলযোগ করে সন্ধ্যা ৯য় ঘটিকা থেকে ১১ ঘটিকা পর্য্যন্ত কিছু বিশ্রাম গ্রহণের লীলা করে তিঁনি শেষ সমগ্ররাত্রে শ্রীহরিনাম প্রভুর সেবায় নিমগ্ন থাকতেন। একদা দীর্ঘকাল যাবৎ ভাব সমাধি প্রায় অবস্থা দেখে মহা চিন্তিত হয়ে তাঁকে ডাকতে গেলে– অনেক সময় পর তিঁনি সাড়া দিতে বাধ্য হন এবং বলেন যে তোমরা আমাকে ডাকলে কেন ? আমি স্বর্গরাজ ইন্দ্রের সভায় কোন এক বিশেষ বিচার বিষয়ে আহূত হয়ে সেখানে গিয়েছিলাম, ব্যস্ত ছিলাম।

লৌকিক লীলাতে যদিও তিঁনি পূর্ব্ব বংশগত বিচারে শাক্ত মত প্রাথমিকভাবে গ্রহণের লীলা প্রদর্শন করেন বা সেই মতো আহার-বিহার লীলা বাহ্যতঃ প্রদর্শন করেন তথাপি নিত্যসিদ্ধ গৌরাঙ্গপার্ষদ হিসাবে কিছু মাত্র দোষ তাঁকে স্পর্শ করে দূষিত করতে সক্ষম নয়, যথা এ সম্বন্ধে শ্রীমদ্ভাগবত প্রমাণে দেখা যায় যে শুকদেব গোস্বামী বলেন,— 


ধৰ্ম্মব্যতিক্রমো দৃষ্ট ঈশ্বরাণাঞ্চ সাহসম্।

তেজীয়সাং ন দোষায় বহ্নেঃ সর্ব্বভুজো যথা॥ (ভাঃ ১০|৩৩|২৯)


অনুবাদ - শ্রীশুকদেব কহিলেন, হে রাজন! অগ্নি সর্ব্বভুক্ হইয়াও যেরূপ দোষভাক্ হ'ন না, সমর্থবান্ তেজস্বী পুরুষদিগেরও সেইরূপ ধৰ্ম্ম-মর্য্যাদা লঙ্ঘন ও স্ত্রীসন্দর্শনাদি দৃষ্ট হইলে উহা দূষণীয় নহে॥


বশিষ্ট্য মুনিকে নরমাংস খাইয়েও দূষিত করা যায়নি বা অপ্সরা সঙ্গ করিবার পরও তাঁকে বা বিশ্বামিত্র মুনিকে দূষণ সম্ভাব হয়নি, কারণ তারা জ্বলন্ত আগুন সদৃশ্। কারন রুদ্র ভগবান বিনা, অন্য কে ঐ ক্ষীর সাগর মন্থনোত্থ হলাহল কালকূট বিষ পান করতে সক্ষম? যেক্ষেত্রে শ্রীরায়-রামানন্দ মহাশয়কে স্ত্রীদর্শন-স্পর্শন জনিত দোষ দূষিত করতে সক্ষম না হয়, বরং স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যদেব বলেন যে,—


 এক রামানন্দের হয় ঐছে অধিকার।

  তা’তে জানি অপ্রাকৃত দেহ তাঁহার॥ (চৈঃচঃ অঃ ৫|৪২)


সেক্ষেত্রে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয়ের সম্বন্ধে কি বিচার হতে পারে, আবার অনেক সময় কার্য্যগতিকে এক দেহে দুই মহাজনের উপস্থিতি হয়ে থাকে, যথা শ্রীল বৃন্দাবন দাস ঠাকুর মহাশয়ে শ্রীল ব্যাসদেব ও কুসুমপীড় সখা, শ্রীল হরিদাস ঠাকুর মহাশয়ে ঋচিক মুনি পুত্র ও ব্রহ্মাজী, সেক্ষেত্রে হয়তো নিত্যসিদ্ধ ভগবৎ-পার্ষদ শ্রীল সচ্চিদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয়ের শরীরে শ্রীকেদারনাথ দত্ত কিছুদিনের জন্য ঐরূপ লীলা করেছিলেন। সুক্ষ শরীর নিয়ে যদি সেই নিত্যসিদ্ধ পার্ষদদ্বয় দিতি মায়ের গর্ভজাত জড় শরীরে অর্থাৎ হিরন্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু অসুরদ্বয়ের শরীরে যথাক্রমে প্রবিষ্ট হয়ে থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে শ্রীঠাকুর ভক্তিবিনোদ সম্বন্ধে ঐরূপ সন্দেহের অবকাশই বা কেন! এ বিষয়ে আগা গোড়া পূর্ব্বাপর বিচারে সকল সৎশাস্ত্রের এই সিদ্ধান্তই সর্ব্বোপরি স্থান পায় যে,— সর্ব্বোপরি ভগবৎ-ইচ্ছাই বলবান, নচেৎ কেন ভগবৎ-মায়া আমাদের চোখে ধুলা দিয়ে বাল্মিকী মুনিকে, বিল্বমঙ্গঁল ঠাকুরকে, বিদ্যাপতিকে, বড়ু চন্ডীদাসকে, ছোট হরিদাসকে, শ্রীল সচ্চিদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুরকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে ভগবত প্রাপ্তির পথ চিরতরে রুদ্ধ করে দেবেন আমাদের জন্য! 

শ্রীমৎ ভাগবত প্রমাণে দেখা যায় যে,— 


যৎপাদপঙ্কজ-পরাগ-নিষেব-তৃপ্তা

যোগপ্রভাব-বিধুতাখিল-কৰ্ম্মবন্ধাঃ। 

স্বৈরং চরন্তি মুনয়োহপি ন নহ্যমান

-স্তস্যেচ্ছয়াত্তবপুষঃ কুত এব বন্ধঃ॥ (ভাঃ ১০|৩৩|৩৪)


অনুবাদ – যাঁহার পাদপদ্ম রেণুর সেবা দ্বারা পরিতৃপ্ত ভক্তবৃন্দ, যোগপ্রভাবে নিখিল কৰ্ম্মবন্ধ হইতে বিমুক্ত যোগী এবং জ্ঞানিগণও বন্ধন প্রাপ্ত হ'ন না, যিনি স্বেচ্ছাপূর্ব্বক অপ্রাকৃত বপু প্রকট করিয়াছেন, সেই স্বয়ং ভগবান্ কৃষ্ণের বন্ধন কিরূপে হইতে পারে?


সেক্ষেত্রে,– “বহ্নি-সূর্য্য-ব্রাহ্মণেভ্য ত্যেজিয়ান্ বৈষ্ণব সদা”– এই বিচারে শ্রীল ঠাকুর বহু বহু দোষ গুণের ঊর্ধ্বে অবস্থিত।

ভগবৎ-ইচ্ছাই সর্ব্বোপরি বলবান এ কথা অনস্বীকার্য্য, কারন ইচ্ছাশক্তির একচ্ছত্র অধিপতি হলেন নন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণ, এক্ষেত্রে তিঁনি তাঁরই প্রথম প্রকাশ বিগ্রহ শ্রীবলদেব মহাশয়কেও অতিক্রম করে বিরাজমান আছেন। যদিও একথা ধ্রুবসত্য যে শ্রীবলদেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অভিন্ন বিগ্রহ, শুধু তাই নয় আকর গুরুতত্ত্ব শ্রীবলদেবের সম্মুখে শ্রীকৃষ্ণ সদা-সর্ব্বদা পরম শ্রদ্ধা ভক্তি ও সম্ভ্রম বজায় রাখতে ব্যস্ত, ঠিক যেমন শ্রীবিশ্বরূপের সম্মুখে শ্রীগৌরাঙ্গদেব নিমাই এর অবস্থা। ঐ পরম চঞ্চল শিশু নিমাই কা কেও পরোয়া করে না— ভয় পায় না। পিতা, মাতা, মাসি, মামা, দাদু, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব বা কোন নতুন লোক অথবা চোর-ডাকাত কাউকেও ভয় পায় না এই শিশু, কিন্তু বিশ্বরূপের সম্মুখে একেবারে জড়-সড় হয়ে যায়। কি কারনে সেই প্রথম প্রকাশ বিগ্রহ শ্রীবলদেব জী মহাশয় কেও তিঁনি প্রাক্ মুখে সেই গোবৎসহরণ লীলা জানতে দেননি? কি কারনে যশোদা মা বা রোহিণী মা পুতনা রাক্ষসীর ঘৃণ্য স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারলেন না? কি কারনে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড শিশুর মুখ-গহ্বরে দেখে মহা বিস্ময় প্রাপ্ত হয়েও যশোদা মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভগবত্তা উপলব্ধি করতে পারলেন না? কি কারনে দামোদর গোপালকে এত এত দড়ি আদি সংগ্রহ করে সংযুক্ত করেও বন্ধন করতে পারেন নি?— ইত্যাদি অনেক অনেক অত্যদ্ভুত সংশয় সন্দেহ বা প্রশ্ন উত্থিত হতে পারে। ওই সকল বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধান এই যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দুই প্রকার মায়ার কথা পাওয়া যায়,— যশোদা মা বা রোহিণী মা সময়ের সময়ে ভগবত মায়ায় মহিত হয়ে পরম সত্যবস্তুকে বিপদগ্রস্ত আবিষ্কার করে নিজ নিজ বাৎসল্যরসের পরিপুষ্টি সাধন করে ধন্যাতিধন্য হয়ে গিয়েছিলেন। ভগবল্লীলা পরিপুষ্টিকরণে এই সকল মায়া-মোহ, যোগমায়া কৃত বলে জানা উচিত। একেই বলা হয় ‘স্বজন-বিমোহিনী মায়া’। তদ্বিপরীত বিমুখজন বিমোহিনী মায়া– যা কিনা মহামায়া নামে প্রসিদ্ধা, কংস, জরাসন্ধ, শিশুপাল, পুতনা, অঘা, বকা, অরিষ্ট, বৃষ, বৎস,– সকলেই ঐ মায়ায় মোহিত হয়ে পরম সত্য বস্তু থেকে বহু বহু দূরে নিক্ষিপ্ত বলে জানা উচিত, নচেৎ মুড়ি-মিজরি একদড় বুঝে পরম সত্যবস্তু থেকে বহু দূরে নিক্ষিপ্ত হয়ে যেতে হবে।

            

ক্রমশঃ প্রকাশ্য......



 
 
 

Comments


WhatsApp Image 2025-04-24 at 09.04_edite
  • Instagram
  • Facebook
  • Youtube
  • Whatsapp
  • Telegram
  • Dribbble
  • TikTok
WhatsApp Image 2025-04-24 at 09.05_edite

@২০২৪ চেতনার জাগরণ - এর দ্বারা

bottom of page