top of page

চেতনার জাগরণ! নাকি সমালোচনার জবাব?

  • Jan 27, 2024
  • 5 min read

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ


বজ্রাদপি কঠোরাণি মৃদুণি কুসুমাদপি।

লোকত্তরাণাং চেতাংসিকোহি বিজ্ঞাতুমীশ্বরঃ৷৷


(চৈঃ চঃ মঃ ৭, উত্তর রামচরিত বাক্য) অলৌকিক পুরুষদিগের চিত্ত বজ্র অপেক্ষা কঠোর, এবং কুসুম অপেক্ষা মৃদু হয়; জড় বিচার সম্পন্ন জনগণ কেউই তা বুঝিবার যোগ্য হয় না। গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ-পরমহংস জগদ্গুরু জানিয়েছেন যে,—“ভগবৎচরণে সম্পূর্ণ শরণাগতি না থকিলে কেউ অকৈতব সত্য কথা নির্ভীকভাবে কীর্ত্তন করিতে পারে না।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে,—“জনগণের আনন্দ বিধানের চেষ্টা (অর্থাৎ লোকসংগ্রহ) এবং ভগবানের আনন্দ বিধানের চেষ্টা আদৌ এক কথা নয়।” প্রথমটি অভক্তি এবং দ্বিতীয়টি ভক্তি। অকৈতব সত্য কীৰ্ত্তনে ‘তৃণাদপি সুনীচ’ ভাবের বাস্তব পরিচয় মেলে। শ্রীল প্রভুপাদের বিচারে স্ব-লাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠা লাভে সম্পূর্ণ অনীহাই বাস্তবিক তৃণাদপি সুনীচ ভাব। কিছু আকু-পাকু কপটভাব দেখে অনেকেই ‘তৃণাদপি সুনীচ’ ভাবের সিদ্ধান্তে উপনীত হন। কিন্তু তা আদৌ উচিত নয়। শ্রীল প্রভুপাদ বিচারিত—‘বৈষ্ণবকে’? এই সিদ্ধান্ত বিচারে তিনি লিখেছেন যে,— “কনক কামিনী প্রতিষ্ঠা-বাঘিনী ছাড়িয়াছে যাঁরে সেই ত’ বৈষ্ণব।”

এই অন্ধ সমাজ এইসব কিছু মানে না বা বুঝে না। শ্রীল প্রভুপাদ জানিয়েছেন যে,—শ্রীল বৃন্দাবনদাস ঠাকুর মহাশয় কর্তৃক নিম্নলিখিত বক্তব্য—

“এত পরিহারেও যে পাপী নিন্দা করে।

তবে লাথি মারি তা'র মাথার উপরে॥” (শ্রীচৈতন্য ভাগবত

এবং শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী কর্তৃক নিম্নলিখিত বক্তব্য অর্থাৎ শ্লোকে—

“জগাই মাধাই হইতে মুঞি সে পাপিষ্ঠ। পুরীষের কীট হইতে মুঞি সে লঘিষ্ঠ৷৷ মোর নাম শুনে যেই তার পুণ্য ক্ষয়। মোর নাম লয় যেই তার পাপ হয়৷

(চৈঃ চঃ আঃ ৫/২০৫-২০৬)

উভয়ের ক্ষেত্রে একই তৃণাদপি ভাবের প্রকাশ পেয়েছে। মূর্খ সমাজ এ'সব কিছুই বুঝে না। শ্রীল প্রভুপাদ পার্ষদ শ্রীল ত্রিবিক্রম মহারাজ প্রায়শ বলতেন যে,—“শুয়ারে চেনে কচু, বাঁদরে চেনে কলা।” শ্রীমন্মহাপ্রভু কেন শ্রীবল্লভাবচার্য্য মহাশয়কে শ্রীধর স্বামী কৃত ভাষ্য অবমাননার দায়ে তাঁকে ‘বেশ্যা’ মধ্যে গণ্য করতে গেলেন, অথবা সামান্য দোষে কেন তিঁনি ছোট হরিদাসকে চিরতরে পরিত্যাগ করেন। আবার কেনই বা শ্রীরামানন্দ রায় মহাশয়কে দেবদাসীগণের নিভৃত পরিচর্য্যাতেও প্রশংসা করে বললেন,—“এক রামানন্দের হয় ঐছে অধিকার।” শ্রীল প্রভুপাদই বা কেন বললেন যে,—“পরমহংস গুরু-বৈষ্ণবের সেবার জন্য যদি আমাকে অনন্তকালের জন্য contract করে নরকে যেতে হয় তথাপি রাজী আছি এবং শ্রীল ভক্তিপ্রজ্ঞান কেশব গোস্বামী মহারাজ কেন ভরাসভায় শ্রোতা-জনগণকে চামার বলেন— এইসব কথার গভীর অন্তরালে কত যে স্নেহ-করুণার প্রকাশ রয়েছে জীব-উদ্ধার প্রসঙ্গে, তা কেই বা বুঝতে চায়! তবে আমারা গৌড়ীয় মঠের মৰ্ম্মি ভক্তবৃন্দের মুখে শুনেছি যে, সমগ্র গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর—নিস্বার্থ আত্মবলিদান প্রসঙ্গ চিরতরে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

শ্রীল বাবা মহারাজের একথা আমরা শ্রীনৃসিংহদেবের শ্রীচরণ স্মরণে প্রতিজ্ঞা করে বলতে পারি। বহুভাগ্যে আপনারাও কোন না কোনদিন একথা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন — যখন বাস্তব আত্মমঙ্গল কি-তা’ অনুভব করতে সক্ষম হবেন। কিছু যদি মনে না করেন, তবে বলি যে,—“আপনারা যারা পরমসত্য বস্তু লাভের জন্য আদৌ ব্যস্ত নন, কিংবা নিজ নিজ স্বার্থ হানির পীড়ায় পীড়িত, তারা ছাড়া সমগ্র বিশ্বে যাঁর হাজার হাজার

  

কথা ও লেখনীর প্রতিবাদ আজ পর্যন্ত কেউ করতে চেষ্টা করেন নি বা যারা সামান্য চেষ্টা মাত্র করেছিলেন, তারা কেউ পার পান নাই অর্থাৎ চুপ্ করতে বাধ্য হয়েছেন। আসলে সমগ্র জীবন মিথ্যা শুনতে শুনতে অভ্যস্তজন সত্যকেই মিথ্যা বুঝে বঞ্চিত হয়ে যায়। বাস্তবিক পক্ষে তাঁ’র নিকটে গেলে, তাঁ’র অমায়িক ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে সকলেই তাঁ’র নিজজন হয়ে যায়। তিনি কদাপি বঞ্চনাময় মিষ্টি বাক্য বলেন না—এটাই তার দোষ।

পরমহংস জগদ্গুরু শ্রীশ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ জানিয়েছেন যে,—“সমগ্র জগদ্বাসী যদি আমার বিরুদ্ধে চলে যায়, এমন কি যারা আমাকে আশ্রয় নেবার অভিনয় করেছেন, তাহাও যদি একে একে আমাকে ছেড়ে চলে যায়, তথাপি শ্রীগুরুচরণের ছত্রছায়ায় দাঁড়িয়ে আমি ঐ পরম সত্যের কথা নির্ভীক ভাবে কীর্ত্তন করতে পিছুপা হব না।”—ঠিক তদ্রূপ উনিও পরম সত্যের সংরক্ষণে অর্থাৎ মিথ্যা দলনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আছেন। বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে,—নারিকেল ফলের বাইরে কঠোর আবরণ দেখে ভেতরের সুমিষ্ট ফল ও সাদু জল থেকে বৃথা বঞ্চিত হয়ে গেলেন অনেকেই। হায় ভগবান্‌! যিনি সর্ব্বদা সকলের চরণধূলি মস্তকে নিতে রাজী—সেই তিনি ছাড়া অন্য কেই বা এই কঠোর স্নেহের বাণী বলতে পারেন। শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়শঃ বলতেন যে,—“সকল জীবগণের স্ব-স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত করিয়ে দেওয়ার সু-প্রচেষ্টাই বাস্তব জীবে দয়া, বাকী সকলই বঞ্চনাময় মিষ্ট কথার আবরণে জীবহিংসা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। তিনি আরও জানিয়েছেন যে,—“হরিকথা কীর্ত্তন তথা হরিভজনের নামে যে বা যারা জগদ্বাসীকে বঞ্চনা করছে, তাদের কাছে বঞ্চিত হওয়াটাই বর্ত্তমান যুগের এক যুগধর্ম্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।” অর্থাৎ বঞ্চিত না হলে আদৌ ভাল লাগে না। আমার বংশ পরিচয় তথা পিতা-মাতার পরিচয় চিরকাল গোপন করে গেলে—সেক্ষেত্রে লোক আমাকে ‘বেজন্মা’ ছাড়া আর কোন্ শব্দে চিহ্নিত করতে পারে? অন্য কোন ভাল শব্দ জানা আছে কি? যতদিন অবিদ্যা পীড়ায়-পীড়িত থাকা হয়, আপনাদের সেই পরসত্য সিদ্ধান্ত শ্রবণে আপত্তি থাকবেই। অর্থাৎ যতদিন না নিরপেক্ষা ভূমিকায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়, ততদিন মায়া-পিশাচী ছাড়ে না। যথা শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের বাক্য—

“নিরপেক্ষ না হইলে ধৰ্ম্ম না যায় রক্ষণে।”

অথবা শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত বাক্য—“পিশাচী পাইলে যথা মতিচ্ছন্ন হয়। মায়াবদ্ধ জীবের হয় সেভাব উদয়৷” যত কষ্টই বা হোক্ না কেন, তবু জেনে রাখুন যে,—“এই সুতীব্র বাস্তব সত্যই জীবনে পরম মঙ্গল এনে দেবেই। বিদ্বেষ ফলে ভযঙ্কর বিপথ্ গামী হতেই হবে। পরমসত্যের বিরুদ্ধে বিরোধিতা চিরকালই ছিল, আছে ও থাকবে, এটা নূতন কিছু নয়। শ্রীল প্রহ্লাদ মহারাজের সত্য প্রবচনে অসুররাজ হিরণ্যকশিপুর বিরেধিতা অথবা বিভীষণের প্রবচনে শ্রীলঙ্কেশ্বর রাবণের রিরোধিতা বিষয়ে সকলেই অবগত আছেন। মহারাজ মনিন্দ্রচন্দ্রের সভায় শ্রীল প্রভুপাদের অপমান, অথবা শ্রীনীলাচলে শ্রীল প্রভুপাদের প্রাণ সংশয় প্রসঙ্গ এবং শ্রীনবদ্বীপ-ধাম পরিক্রমা কালে পোড়ামাতলায় শ্রীল প্রভুপাদের প্রাণ সংশয় প্রসঙ্গ—এইসবই পরমসত্য প্রবচনের ফল। অথবা স্বয়ং ভগবান্ শ্রীমন্মহাপ্রভুকেও (নবদ্বীপ লীলায়) যখন ছাত্রদল মারব বলে সংকল্প করেছিল, তখন শ্রীমন্মহাপ্রভু আপশোস করে বলেছিলেন, যে—সমগ্র জগতের পরমমঙ্গল অর্থে আমার আগমন, কিন্তু হায়! ঠিক তদ্বিপরীত হয়ে গেল।

শ্রীচৈতন্যভাগবতের মধ্য খণ্ডের ২৬/১২১ নং শ্লোক প্রমাণে প্রভুবাক্য—

“করিল পিপ্পলি খণ্ড কফ্ নিবারিতে।

উলটিয়া আরো কফ্ বাড়িল দেহেতে৷৷”

অর্থাৎ শ্রীল প্রভুপাদের ভাষ্যে দেখা যায় যে, আমি জগতের বাহ্য দর্শনে প্রপীড়িত জীবগণের জন্য অনুদ্ঘাটিত সত্য প্রচার করিবার বাসনা মুখে চেষ্টা দেখাইলাম। কিন্তু তাহার ফল উহারা গ্রহণ করা দূরে থাকুক্, বরং ভীষণতর অপরাধের বোঝা অধিক পরিমাণে নিজস্কন্ধে চাপাইয়া লইল। জীবগণের নিত্যমঙ্গলের কথা প্রচার (বা প্রকাশ) করিতে গেলাম, তাহারা না বুঝিয়া আপাত দর্শনে (অর্থাৎ মায়াতে মোহিত হইয়া) বিমূঢ় হইয়া ‘শুদ্ধভক্তি’-প্রচারের বিরোধী হইয়া দাঁড়াইল। বৈদ্যক শাস্ত্রে কফ্ পীড়িত ধাতু ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য লাভ করাইবার জন্য পিপ্পলীখণ্ড নামক ঔষধের ব্যবস্থা প্রদান করা হয়। উক্ত ঔষধ দ্বারা কফ্ পীড়িত বা আৰ্ত্ত

  

জনগণের স্বাস্থ্য লাভ করা দূরে থাকুক্, বরং তাহাতে কফ্ ব্যধি আরও অধিক বৃদ্ধি পাইল। সাংসারিক ভোগী সম্প্রদায় ভোগ বিবর্দ্ধনের জন্যই কল্পিত ভগবানের উপাসনা করে; ভগবানের প্রীতির জন্য তাহারা কোন অনুষ্ঠান না করিয়া আত্মেন্দ্রিয় তর্পণ সাধনেই ব্যস্ত হয়। স্বীয় ভোগকেই তাহারা প্রয়োজন জ্ঞান করে—সুদুৰ্ল্লভ কৃষ্ণপ্রেম সেবার কোন সন্ধানই পান না।শ্ৰীচৈঃভাঃমঃ ২৬/১২৯-১৩০) শ্লোকদ্বয়ে শ্রীমন্মহাপ্রভুর নিজ উক্তি— “আমা দেখি’ কোথা পাইবেক বন্ধ নাশ। এক গুণ বন্ধ ছিল হৈল কোটি পাশ ৷৷ আমা মারিতে যবে করিলেক মনে। তখনই পড়ি' গেল অশেষ বন্ধনে৷” আশাকরি এখন আপনারা আপনাদের কুৎসিৎ কদাকার জঘণ্য মন্তব্যের জবাব পেয়েছেন। আপনাদের দোষ কি! এক অন্ধ দ্বারা অন্য অন্ধ ব্যক্তি পরিচালিত হয়ে এইরূপ দুর্গতি ছাড়া আর কি লাভ করতে পারে। শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে শ্রীপ্রহ্লাদ বচন— “ন তে বিদুঃ স্বার্থগতিং হি বিষ্ণুং দুরাশয়া যে বহিরথমানিনঃ।

অন্ধা যথান্ধৈরুপনীয়মানাস্তেঽপীশতন্ত্র্যামুরুদাল্লি বদ্ধাঃ৷৷” (ভাঃ ৭/৫/৩১)

ক্রিয়াসক্তান্ ধিগ্ ধিগ্ বিকটতপসো ধিক্ চ যমিনঃ ধিগস্তু ব্রহ্মাহং বদনপরিফুল্লান্ জড়মতীন্। কিমেতান্ শোচামো বিষয়রসমত্তান্নরপশূন্ন কেষাঞ্চিল্লেশোঽপ্যহহ মিলিতো গৌরমধুনঃ৷(শ্রীচৈতন্যচন্দ্ৰামৃত-৩২সংখ্যা) নিত্যনৈমিত্তিকাদি কৰ্ম্মসমূহে সর্ব্বদা অগ্রহযুক্ত জড়মতি অর্থাৎ যথার্থ পরমার্থানুসন্ধানে বিবেকশূন্য ব্যক্তিদিগকে ধিক্, উৎকট তপস্যাকারী ব্যক্তিগণকে ধিক্, শুষ্ক ব্রহ্মচর্য্যাদি বা যম-নিয়মাদি যোগচেষ্টায় প্রধাবিত আরোহবাদীকে ধিক্, ‘আমিই ব্রহ্ম’—এইরূপ শব্দোচ্চারণকারী মুক্তাভিমানী বৃথা প্রফুল্লানন ব্যক্তিদিগকে ধিক্‌;—ইহারা সকলেই নরাকার পশু, যেহেতু ইহারা ভগবৎসম্বন্ধ-রহিত বিষয়ভোগের মদে গর্বিত। এই সকল নরপশুগণের জন্য আর কি শোক করিব? হায়! ইহাদিগের কেহই গৌরপাদপদ্ম-মকরন্দের লেশও পাইল না।

বিঃ দ্রঃ—অযথা আপনারা নিজেরা নিজেদের ঘোরতর অমঙ্গল ডেকে নিয়ে এলেন দেখে শ্রীল বাবা মহারাজ বড়ই দুঃখিত।

—পরিশেষে ক্ষমাপ্রার্থী

 
 
 

Comments


WhatsApp Image 2025-04-24 at 09.04_edite
  • Instagram
  • Facebook
  • Youtube
  • Whatsapp
  • Telegram
  • Dribbble
  • TikTok
WhatsApp Image 2025-04-24 at 09.05_edite

@২০২৪ চেতনার জাগরণ - এর দ্বারা

bottom of page