দুঃসঙ্গ-বর্জ্জন ও শ্রীগৌর-বিনোদ-বাণী-ধারা সংরক্ষণে শ্রীল বিনোদ-দা’র দৃঢ়নিষ্ঠা
- The Symbol of Faith
- Feb 15
- 2 min read
Updated: Jul 9

দুঃসঙ্গ-বর্জ্জন ও শ্রীগৌর-বিনোদ-বাণী-ধারা সংরক্ষণে শ্রীল বিনোদ-দা’র দৃঢ়নিষ্ঠা
(শ্রীগুরু ত্যাগী তথা শ্রীগুরু প্রেষ্ঠ-গণের কার্য্যকলাপে পার্থক্য)
শ্রীগৌড়ীয় মঠাচার্য্য 'পরবিদ্যাভূষণ' শ্রীরূপানুগ আচার-বিচার পরিত্যাগ করিলে তাঁহার ভক্তিপ্রতিকূল-আচরণে ক্ষুব্ধ গৌড়ীয় মঠবাসী বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ শ্রীল বিনোদবিহারী ব্রহ্মচারী কৃতিরত্ন প্রভুর নিকট প্রতিকার প্রার্থনা করিলেন। সকলের দুঃখ-দুর্দ্দশার কথা শুনিয়া 'বজ্রাদপি-কঠোর' শ্রীল কৃতিরত্ন প্রভু তাঁহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাবলম্বনে কৃতসঙ্কল্প হইলেন। তিনি নানাস্থানে পত্রাদি লিখিয়া মিশনবাসীদের 'উৎসাহান্নিশ্চয়াং'-শ্লোকাবলম্বনে অভয় ও আশ্বাসদান করিয়া-ছিলেন। বিরোধিদল গুপ্তভাবে সেই সকল পত্রাদি হস্তগত করিয়া সগোষ্ঠী তাঁহাকে বিপাকে ফেলিবার চেষ্টা করিতে লাগিল ও ছলে-বলে-কলে-কৌশলে কৃতিরত্ন প্রভু ও তাঁহার দলকে দমন করিতে কৃতসঙ্কল্প হইল। একদিন শ্রীচৈতন্যমঠে দুইদলে সংঘর্ষ হয়; অপরপক্ষের এক রাখাল শিষ্য খেজুরগাছ কাটিতে গিয়া পা পিছলাইয়া পড়িয়া মারা যায়। তাহাকে কেন্দ্র করিয়া শ্রীল বিনোদবিহারী ব্রহ্মচারী, শ্রীমহানন্দ ব্রহ্মচারী, শ্রীনরহরি ব্রহ্মচারী ও অপর ১৯ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা খুনের মামলা দায়ের করিয়া অবৈধভাবে শ্রীচৈতন্যমঠের স্থায়ী দখল হইতে উৎখাতের জন্য গ্রেপ্তার করাইল। ইহার পূর্ব্বেও বিরুদ্ধ-পক্ষ কলিকাতা শ্রীগৌড়ীয় মঠ হইতে সরাইবার জন্য শ্রীল কুঞ্জবিহারী অধিকারী ভাগবতরত্নসহ শ্রীপাদ অতুলচন্দ্র ভক্তিসারঙ্গ গোস্বামী, শ্রীপাদ বিনোদবিহারী ব্রহ্মচারী, শ্রীমদ্ভক্তিরক্ষক শ্রীধর মহারাজ, শ্রীমদ্ভক্তি-সর্ব্বস্ব গিরি মহারাজ, শ্রীপাদ হয়গ্রীব ব্রহ্মচারী প্রভৃতি ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারী করিয়াছিল। ভাঃ ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে কয়েকজনের হাজত বাস হইলে একদিন শ্রীল সরস্বতী প্রভুপাদ শ্রীপাদ কৃতিরত্ন প্রভুকে দর্শনদান করিয়া জলদগম্ভীরস্বরে বলিলেন,— “তুমি এখনও সন্ন্যাস লইলে না? তুমি সন্ন্যাস গ্রহণপূর্ব্বক সর্ব্বত্র শ্রীমন্মহাপ্রভুর প্রেমধর্ম্মের কথা প্রচার কর। আমি তোমার সমস্ত বাধা-বিঘ্নের দায়িত্ব লইলাম।' সকালে উঠিয়া তিনি তাঁহার সতীর্থ অন্তরঙ্গ শ্রীপাদ নরহরি সেবাবিগ্রহ প্রভু প্রভৃতিকে ঐ ঘটনা জানাইলেন। শ্রীল গুরুপাদপদ্মের আশীর্ব্বাদে তাঁহারা সকলেই খালাস পাইলেন। যাহারা ঐ মোকদ্দমায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়াছিল, পরবর্ত্তীকালে তাহাদের মধ্যে অনেকেরই দৈবশাস্তি হইয়াছিল, কাহারও পুত্র ২।৪ দিনের মধ্যে মারা গেল, কাহারও গৃহ আগুনে পুড়িল, এবং কেহ চক্ষুদ্বয় হারাইয়া দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিয়া বেড়াইতে লাগিল।
১৯৪০ সালে মায়াপুর হইতে চলিয়া আসিয়া শ্রীল বিনোদবিহারী ব্রহ্মচারী কৃতিরত্ন প্রভু, পূজ্যপাদ শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর মহারাজ, শ্রীপাদ নরহরি ব্রহ্মচারী সেবাবিগ্রহ ও অন্যান্য সতীর্থগণের সহিত নবদ্বীপ-সহরস্থ তেঘরিপাড়ার ভাড়াবাড়ীতে "শ্রীদেবানন্দ গৌড়ীয় মঠ” স্থাপনপূর্ব্বক বসবাস করিতে থাকেন এবং প্রচার আরম্ভ করেন।
('শ্রীশ্রীমদ্ভক্তি প্রজ্ঞান কেশব গোস্বামী' নামক গ্রন্থরত্নের অংশ)
Comments