ধর্ম-ব্যবসায়ের প্রতিবাদ
- The Symbol of Faith
- Jan 28
- 2 min read

*ধর্ম-ব্যবসায়ের প্রতিবাদ*
[শ্রীধাম-বৃন্দাবনের পরলোকগত মধুসুদন গোস্বামী সার্বভৌম মহাশয়ের নিকটে লিখিত পত্র]
শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
শ্রীগৌড়ীয়মঠ, কলিকাতা;
১৫ই জানুয়ারী, ১৯২৭।
[ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মঠের ঐকান্তিক শুদ্ধভক্তি-প্রচার- হরি-সেবা অবৈধ বণিগবৃত্তি নহে-শ্রীল প্রভুপাদ-কর্তৃক শ্রীমধুসূদন গোস্বামী মহাশয়কে শুদ্ধভক্তি-প্রচারে অনুরোধ।]
বিপুল-আচার্য্যসম্মান-পুরঃসর-নিবেদনম্
আমি গতকল্য শ্রীধাম-নবদ্বীপ-শ্রীচৈতন্যমঠ হইতে শ্রীগৌড়ীয় মঠে আসিয়াছি। শ্রীধাম হইতে আপনার নিকট একখানি পত্র লিখিয়াছিলাম, বোধ করি পাইয়াছেন।
মিছাভক্তগণের মতে ইন্দ্রিয়তর্পণ ব্যতীত যখন 'ধর্ম্ম' বলিয়া কোন কথা নাই, তখন শুদ্ধভক্তিধর্ম্ম কি শ্রীবৃন্দাবন প্রভৃতিতে পুনঃপ্রচারিত হইবে না? শ্রীবৃন্দাবনের শ্রীবিগ্রহসমূহ কি সমস্তই জাতি-ব্যবসায়ীর ব্যবসায়ের পণ্যদ্রব্যই থাকিবে? ঐসকল অবৈধ ব্যবসায়ী বেণিয়ার ধর্ম্ম গ্রহণ করিয়া ঠাকুর-সেবার নামে, মন্ত্রব্যবসায়ের নামে নিজ নিজ স্বার্থ পোষণ করিতে থাকিবে এবং উহাই কি 'ধর্ম্ম' বলিয়া পরিগণিত হইবে? শুদ্ধভক্তি-কথার দ্বারা জগতের হিতসাধন হউক্, ইহা কি বর্ত্তমান বৃন্দাবন-বাসীর অভিপ্রেত হওয়া উচিত নহে?
শুদ্ধভক্তগণ কিন্তু চিরকালই মিছাভক্তির অনুমোদন করেন না। কলিকালে, ভক্তিপথ কোটিকণ্টকরুদ্ধ হইয়াছে। এখানে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মঠ ব্যতীত আর অন্য উপায় নাই। একথা মুর্খলোকেরা বুঝিতে পারিতেছে না। আপনি আমাদের কথা একটু হিন্দিতে—ব্রজবুলিতে ইস্তাহারের মত প্রচার করিয়া দিলে বোধ করি অনেকের দয়া হইতে পারে।
*ঠাকুরসেবা পণ্যদ্রব্য নহে এবং সেবকগণ বাণিয়া নহেন;* তাঁহারা ভক্ত বৈষ্ণব। সর্ব্বস্ব ত্যাগ করিয়া নিজের ও জগতের মঙ্গল করিবার জন্য কীর্ত্তনমুখে হরিসেবা করিতেছেন। বেণিয়াদিগের বস্তু চাল, ধান; ঠাকুরসেবার ছলনায় পাথরের বাড়ী, ঘর ইত্যাদি। সেই সকলের সাহায্যে ব্যবসায় করিয়া তাহারা নিজের উদরভরণ করে, ঠাকুরবাড়ী খরিদ করে, অযোগ্য ব্যক্তির দ্বারা সেবাপরাধ করায়, অযোগ্য ব্যক্তি হইতে মন্ত্রগ্রহণের ছলনা করে, ভজনের উপদেশ লইয়া থাকে ও কত কি করে! ঐ সকল কার্য্যে শুদ্ধভক্ত-সম্প্রদায়ের কোন আস্থা নাই।
ভজন ছাড়িয়া হুজুগ করা ভক্ত-সম্প্রদায়ের কর্ত্তব্য নহে। ব্যবহারিক জগতে যে প্রকার সত্যের দুর্গতি উপস্থিত হইয়াছে, তাহাতে সরলতার পরিবর্তে কপটতাই 'ধর্ম্ম' বলিয়া চলিতেছে। এক্ষণে প্রকৃত গৌরভক্তগণ পরমেশ্বরের স্বরূপলক্ষণ নিরস্তকুহকসত্য জগতে প্রচার করিয়া Pseudo-Vaisnavismএর (বিদ্ধ-বৈষ্ণবতার) হাত হইতে জগৎকে উদ্ধার করা কর্ত্তব্য বোধ করিতেছেন।
আপনি শেষ জীবনে শুদ্ধ-ভক্তিসাম্রাজ্যের জন্য শেষ চেষ্টা করিয়া বৈষ্ণব-সমাজের ধন্যবাদের পাত্র হউন–ইহা আমার প্রার্থনা। 'Vaisnavism Real and Apparent' গ্রন্থ প্রচার হইয়াছে। এক্ষণে তথা-কথিত বৈষ্ণব-জগতের বাস্তব মঙ্গল-বিধান করা আবশ্যক। আপনি যোগ্য পুরুষ, আপনার দ্বারা এই কার্য্য হইতে পারিবে। বঙ্গদেশের কপটতা অনেকটা ধরা পড়িয়া গিয়াছে; সুতরাং সকল দেশেরই যে যে স্থানে ধর্ম্মের ভাণ হইতেছে, তাহা নিরাকৃত হওয়া আবশ্যক।
শ্রীহরিজন কিঙ্কর
শ্রীসিদ্ধান্তসরস্বতী














Comments