top of page

মিথ্যাপ্রচারের দ্বারা নির্মিত ভ্রান্তি বিলাস ভঙ্গেতে দক্ষ ভবতারণ বান্ধব ‘চেতনার জাগরণ'

  • Feb 19, 2024
  • 3 min read

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ

মিথ্যাপ্রচারের দ্বারা নির্মিত ভ্রান্তি বিলাস ভঙ্গেতে দক্ষ ভবতারণ বান্ধব ‘চেতনার জাগরণ'

(কৃষ্ণভক্ত শয়তানের শয়তান বলিয়া জানিবেন)

(নূতন প্রজন্মের নবাগত পথিকগণ কোন ছেলেভোলানো মিথ্যাছলনা ময় কথায় মানবে না, তাঁরা প্রত্যেক বক্তব্যের বিজ্ঞান ভিত্তিক উত্তর চায়, পারবেন কি উত্তর দিতে ?) 

পরস্বভাব কর্ম্মাণি ন প্রশংসেন্ন গর্হয়েৎ। 

বিশ্বমেকাত্মকং পশ্যন্ প্রকৃত্যা পুরুষেণ চ।। (চৈঃ চঃ অন্ত্য- ৮/৭৬) 

শাস্ত্রে যেই দুই ধৰ্ম্ম করিয়াছে বর্জ্জন। 

সেই কৰ্ম্ম নিরন্তর ইঁহার কারণ। (চৈঃ চঃ অন্ত্য- ৮/৭৫) 

যাঁহা গুণ শত আছে, না করে গ্রহণ । 

গুণ মধ্যে ছলে করে দোষ আরোপণ।। (চৈঃ চঃ অন্ত্য- ৮/৭৯) 

অর্থাৎ প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগে নির্ম্মিত এই বিশ্ব প্রপঞ্চ এক অভিন্ন স্বরূপ জেনে বিমহিত হওয়া উচিত নয় তথা কারও নিন্দা বা প্রশংসা করা উচিত নয়। শাস্ত্রে যে দুটি কথা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ, ঠিক সেই দুটি বিষয়ে রামচন্দ্রপুরী সর্ব্বদাই ব্যস্ত ।। ‘পরস্বভাব’ শ্লোকে পূর্ব্ববিধি “প্রশংসা করিবে না” এবং পরবিধি “নিন্দা করিবে না” পাওয়া যায়। পূৰ্ব্ববিধি অপেক্ষা পরবিধি বলবান হইলে ইহাই বুঝাযায় যে, লোকের প্রশংসা করা উচিত নয়, তথাপি তাদৃশ দোষাবহ নহে; পরন্তু নিন্দা নিশ্চয়ই করিবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে রামচন্দ্রপুরী পূর্ব্ব বিধি ‘অপরের প্রশংসা’ তো করেই না। কিন্তু পর বিধি ‘অন্যের নিন্দা করিবে না’ পালন না করে কেবল অপরের দোষ দর্শন করায় বা নিন্দায় সদা সৰ্ব্বদা ব্যস্ত থাকে। 

আবার শ্রীমদ্ভাগবত প্রমাণে ভগবদ্ বাক্য-- 

ন ময্যেকান্ত ভক্তানাং গুণদোষোদ্ভবা গুণাঃ। সাধুনাং সমচিত্তানাং বুদ্ধেঃ পরমুপেয়ুষাম । 

যাঁহাদিগের কৃষ্ণেতর বস্তুতে আসক্তি প্রভৃতি অনর্থ বিদূরিত হইয়াছে, যাঁহারা স্থূল লিঙ্গ দেহ দর্শন হইতে অতিক্রান্ত হইয়া প্রত্যেক জীবের আত্মদর্শন করায় সমদৃষ্টি সম্পন্ন হইয়াছেন, আমাতে সেই একান্ত আসক্ত ভক্তগণের বিধি নিষেধ জনিত পাপপুণ্যের ফলভোগ করিতে হয় না বা তাঁদের কোন প্রাকৃত দোষ গুণ স্পর্শ করে না। ফলে শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যদেবের উক্তিতে দেখা যায় যে,-- 

এতেকে যেনা জানিঞা নিন্দে তার কৰ্ম্ম। 

নিজ দোষে সে-ই দুঃখ পায় জন্ম জন্ম।। (চৈঃ চঃ অন্ত্য-৬/৩৪) 

আমরা রামচন্দ্র খাঁনের কদাকার কুৎসিৎ স্বভাব জানি, সে সর্ব্বদা পরমনিৰ্ম্মল শ্রীল নামাচার্য্য হরিদাস ঠাকুরের চরিত্রে দোষ আরোপ করতেই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু তথাপি তা আকাশে মুষ্ঠাঘাতের ন্যায় বিফল হয়েছিল। সেই রামচন্দ্রপুরী নির্ব্বিশেষ গতি লাভ করেছিল, এবং রামচন্দ্র খাঁন সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। 

গৌড়ীয় গোষ্ঠী পতি শ্রীশ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ প্রায়শঃ উপদেশ দিতেন যে,-- “আপনাদের কাছে আমার এটাই উপদেশ যে,--অপরের (পরস্বভাবের) দোষ দর্শন করবেন না, বরং নিজ দোষ গুলি সংশোধন করতে চেষ্টা করবেন। তিনি কখনও এটাও বলতেন যে,-- “বদ্ধজীবের এটাই নৈসর্গীক স্বভাব যে,--সে সর্ব্বদা অপরের দোষ দর্শনেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদ আমাদের এই বলে সতর্ক করেদিয়েছেন যে,--“যখন গুরু বৈষ্ণবগণ অকৈতব করুণা প্রকাশ মূলে আমাদের কঠোর ভর্ৎসনা করেন--আমাদের দোষ গুলি দর্শন করিয়েদিয়ে আমাদের সংশোধনের চেষ্টা করেন, তখন তাঁদের সেই প্রচেষ্টাকে আদৌ ‘অপরের দোষ দর্শনের’ স্বভাব বলে দোষারোপ করা আদৌ উচিত নয়, কারণ পরমকরুণাময় গুরু-বৈষ্ণবগণ যদি আমাদের সংশোধনের জন্য ভূলগুলি দেখিয়ে দিয়ে না বাঁচান, তবে আমরা কিভাবে রক্ষিত হতে পারব? সত্যই এটা বড়ই পরিতাপের বিষয় যে--সাধুরেষ (তথা আচার্য্যের আসনে বসে) ধারণ করে কেউ সর্ব্বদা অপরের সমালোচনা মূলে (সৰ্ব্বদা) কেবল আক্রমন করতে ব্যস্ত থাকে, নিজলাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠা সংরক্ষণই তা’র মূলমন্ত্র। একটা প্রচলিত প্রবাদ বহুদিন যাবদ শুনে আসছিলাম যে--যদি কেউ কাঁচ নিৰ্ম্মিত ঘরে বাস করে কেবল অপরের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয় তথা পাথর বাজি করে, তবে তা আদৌ উচিত নয়, কারণ যদি তা'রা পাথর ছুড়ে মারে, তবে আমার বহু মূল্যবান কাঁচের ঘর ভেঙে পড়ে যবে। পবর্তীকালে এই প্রচলিত প্রবাদের সংশোধন প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল, অর্থাৎ যে জন কাঁচ নির্ম্মিত ক্ষণভঙ্গুর ঘরে বাস করেন তিনি অবশ্যই সর্ব্বদা (নিরন্তর) অপর অধিকারী জনকে পাথর ছুঁড়তে থাকবেন-যাতে তিনি আদৌ আপনার কোন রূপ দোষ দর্শনের সুযোগই না পান। এইটাই বর্তমানে কাকচতুর প্রচার কৌশলীগণের জড় উন্নতির শিখরে আরোহণের উপায় বলে চিহ্নিত হয়েছে। যিনি নিজের নিকট পরাজিত তিনি বিশ্ব জয় করতে পরেন কি? শ্রীল প্রভুপাদ সরস্বতী ঠাকুর বলতেন যে,--‘আগে নিজের নিকট যথেষ্ট প্রচার হলে পর - তবে অপরের নিকট প্রচার করা যায়, নচেৎ আদৌ তা উচিত নয়, এতে হিতে বিপরীত হবে। ” 

তর্ক বিতর্কের কোন প্রতিষ্ঠা খুঁজে পাওয়া যায় না, বরং ‘বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়” এই পন্থাই অবলম্বণ করা উচিত বা ভাল ৷ আদৌ কোন অনুভবশীল বাস্তব সাধুর আবির্ভাব আপনাদের কুলে দেখাতে পারেন কি? যদি বা এক-আধ জনের প্রসঙ্গ উঠতে পারে, তথাপি তারা কিন্তু ভাগবত পরম্পরায় আস্তারেখে ঐ অবস্থায় এসেছিলেন, কিন্তু আদৌ গুরু কৃপায় বা গুরুদত্ত মন্ত্রের বলে নয়, কারণ গুরু পরম্পরা অস্বীকারই আপনাদের মূল ব্যধি। বর্তমান যুগে ঐ রূপ প্রহসনে বিশ্বাসি জন বা মাৎসর্য্য পরায়ণজন বিপুল অর্থ বলে বলিয়ান হয়ে- ব্যাপক মিথ্যাপ্রচারের দ্বারা জনসাধারণকে বা নবাগত জনকে বিভ্রান্ত পূর্ণ মিথ্যা তথ্য গ্রহণ করতে বাধ্য করে চলেছে, ফলে অসহায় জনগণ বাস্তবিকরূপে অপ্রাকৃত শ্রীগৌড়ীয় মঠের স্বরূপ দর্শনে বঞ্চিত হচ্ছে, তথা মহান মহিমাময় গৌড়ীয় মঠের সাধুগণের সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে নরকের পথের যাত্রি হয়ে যাচ্ছে। নিজস্বার্থ সংরক্ষণে তারা এতটাই নৃশংস ও মরিয়া হয়ে উঠেছে যে,--সমগ্র সারস্বত গৌড়ীয় সম্প্রদায়কে তথা শ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর ও তাঁর আদেশ পালনকারী নিজজনগণকে অর্থাৎ স্বপার্ষদ প্রভুপাদকেও বলিদান দিতে সর্ব্বদাই প্রস্তুত আছেন, ছিলেন বা থাকবেন। এদের এতবড় স্পর্ধা যে, গৌড়ীয় মঠ তথা মূল প্রভুপাদের ব্যর্থতা প্রমান করে নিজনিজ অভিমানের প্রতি বৃথা আস্থা স্থাপনে সদাই তৎপর। হিরণাক্ষ বা হিরণ্যকশিপু তথা রাবণ বা কংসের অভিমান ধূলিস্বাৎ হতে বেশি সময় লাগেনি। একথা সৰ্ব্বদা স্মরণে থাকলেই ভাল, নচেৎ পরিণাম ভয়াবহ বলে জানবেন। গৌড়ীয় প্রাচীন পত্রিকায় প্রকাশিত এক অংশ নিম্নে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ প্রকাশিত করে দেওয়া গেল। আমরা কখন ভুলে যাই, বা আদৌ আমাদের শ্রবণগোচর হয় নাই -ঐ সকল মহান গৌড়ীয় গুরুবর্গের (অর্থাৎ গৌড়ীয় মঠের গুরুবর্গের) বিপুল কীর্ত্তি যাঁরা গৌরবাণী প্রচারে অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর মিশন এর জন্য তাঁদের সম্পূর্ণ জীবন যৌবন আত্ম-আহুতি দিয়েছিলেন। তাঁরা যদি আদৌ গ্যালন গ্যালন রক্ত ঐ প্রকল্পে (অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর মিশনের জন্য) ব্যায় না করে থাকতেন তবে আমরা আজ এই ভূমিকায় আসতে পারতাম না--যেখানে পূর্ণ উদিত সূৰ্য্যলোকের তুমি সত্যাত্মক, তোমাতে আমরা শরণাপন্ন হইলাম। নিশ্চিন্ত ভাবে যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর দ্বারা প্রবর্ত্তিত সংকীর্তন আন্দোলনের ন্যায় পূর্ণ উদিত সূর্যালোকের কিরণে উদ্ভাসিত হয়ে নিশ্চিন্ত ভাবে আজ আমরা বিরাজমান আছি। 

তাঁদের পবিত্র স্মৃতিও মহান ক্রিয়াকৰ্ম্ম কদাপি ভুলে যাওয়া উচিত নয়, নচেৎ অকৃতজ্ঞদোষে পতিত হতে হবে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্বের, বর্তমানেরও ভবিষ্যতের ভক্তগণ জয় যুক্ত হউন। অর্থাৎ শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর ভাষায় বলাযায়-- 

হইয়াছেন-হইবেন প্রভুর যত দাস। 

সবার চরণ বন্দো দন্তে করি ঘাস।। 

শ্রীলকেশব গোস্বামী মহারাজ লিখিত সতর্কবাণী--“প্রতিষ্ঠালাভের আশায় নিজেদের প্রতিভা (বা কেরামতি) দেখাইতে যাইয়া যদি আমরা আমাদের পরম হিতৈষী পূর্বাচার্য্যগণকে অজ্ঞ (বা মূর্খ) বলিতে দ্বিধা বোধ না করি, তাহা হইলে আমাদের সন্তান-সন্ততিগণ যে আমাদের উচ্ছিঙ্খল বৃত্তি (অসংলগ্ন বাক্য বা প্রচেষ্টাদি দেখে) লক্ষ্য করিয়া আমাদিগকে অজ্ঞ মূর্খ, অসভ্য (বর্ঝর) প্রভৃতি বলিবে তাহাতে আর বিচিত্র (বা আশ্চর্য্য) কি? শ্রীল প্রভুপাদের উপদেশ অবলম্বনে লিখিত “অশিষ্টাচার প্রবন্ধ হইতে উদ্ধৃত (নদীয়া প্ৰকাশ)। 

নিজেকে বাঁচাতে একটা মিথ্যকে ঢাকতে গেলে শত শত মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। কিন্তু একথা ধ্রুবসত্য যে,-- পরমসত্য বস্তুকে গোপন রাখা আদৌ সম্ভব নয়, আজ নয়তো কাল যে কোন প্রকরে তা প্রকাশ পেতে বাধ্য। শ্রীমদ্ভাগবত প্রমাণে দেখা যায় যে,--সত্যব্ৰতং সত্যপরং ত্রিসত্যং সত্যস্যযোনি নিহিতং চ সত্যে। 

সতস্য সত্যমৃত সত্যনেত্রং সত্যাত্মকং ত্বাং শরণং প্রপন্নাঃ ।। (ভাঃ ১০-২-২৬)

দেবগণ কহিলেন হে কৃষ্ণ! তুমি সতব্রত, তুমি সত্য পর, তুমি ত্রিকালসত্য, তুমি সত্যের জন্মস্থান, সত্যেই তোমার স্থিতি, তুমি সত্যের সত্য, অর্থাৎ নিত্যসত্য, ঋত ও সত্য তোমার হইলেন। যাঁরা আপতঃ সত্যের এই দুনীয়ায় প্রচলিত আপেক্ষিক সত্যকেই গ্রাহ্য করে না, তারা কি আদৌ পরম সত্যকে চায়, না আশ্রয় করতে পারে! মূর্খ জগৎ এই সামান্যতম বিষয়াকেও ধরতে পারেনা, সেক্ষেত্রে আদৌ হরি ভজন করা কি তাদের পক্ষে সম্ভব? এক পতিত জনকে বা তার সস্তা আদর্শকে যদি আমি আমার জীবনের 

চরম আদর্শবলে গ্রহণ করি, সে ক্ষেত্রে কি ফল আশা করতে পারি! রোম-গ্রীক্-ব্যেবিলিয়ন-মিশর প্রভৃতি দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল, কারণ তাঁরা নিজ নিজ পূর্ব্ব ঐতিহ্যের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু হিন্দুগণের সনাতন ধর্ম্ম যুগে যুগের এত অত্যাচারেও ধ্বংস করা সম্ভব হয় নি, কারণ তা নিত্য ধৰ্ম্ম। ঠিক তদ্রূপ এত অত্যাচার বা মিথ্যাপ্রচারেও গৌড়ীয় মঠের বিমল আচার আদর্শ যা শ্রীল ভক্তিবিনোদ ধারাকে সম্পূর্ণ অবিকৃত ভাবে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর--পরমহংস জগদ্গুরু কর্তৃক সংরক্ষিত ও সম্বর্ধিত হয়ে আসছে তা ধ্বংস করা সম্ভব হয় নি বা কোন দিন হবেও না, কারণ সাক্ষাৎ প্রভুপাদের অভয় বাণী আমাদের একমাত্র সম্বল, যথা--“ভক্তিবিনোদ ধারা কদাপি অবরুদ্ধ হবে না।” তিনি জানিয়েছেন যে,--“পরম সত্য বস্তু এত সস্তা নয় যে,--গণ আন্দোলন, উচ্চচিৎকার অথবা লোকবল-অর্থবলের দ্বারা ধ্বংস করা সম্ভব, অথবা গলাটিপে এই পরমসত্যকে কদাপি হত্যা করা সম্ভব নয়। বর্তমানের নব প্রজন্মের যুবক-যুবতী (বা কুমার-কুমারীগণকে) গণকে মিথ্যা ছেলে ভুলান যুক্তি-তর্ক দিয়ে থামান সম্ভব হবে না, কারণ তাঁরা আপনার (আচার্য্য বা ধৰ্ম্মীয় নেতার) প্রত্যেক বিভ্রান্তিজনক উক্তি বা আদেশের বিজ্ঞান ভিত্তিক উত্তর চায়। ---প্রমাণাবলী দেওয়া হবে । 

হয়তো এই কারণেই মুসলিম ধৰ্ম্ম, খৃষ্টান ধৰ্ম্ম, বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম, জৈন ধৰ্ম্ম থেকে বিতশ্রদ্ধ জনগণ দলে দলে সনাতন ধৰ্ম্ম গ্রহণ করে যাচ্ছে। মনে পড়ে সেই--শ্রীল সচ্চিদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর কৃত ভবিষ্যৎবাণী --‘খুব শিঘ্রই সমগ্র জগতে এক মাত্র সনাতন ধৰ্ম্মই বিরাজ মান থাকবে।” ফলে আপনাদের ঐ সকল অজস্র অসংলগ্ন মন্তব্য গুলির সঠিক বিজ্ঞান ভিত্তিক জবাবদিতে পারবেন তো? 

 

 

শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ

মিথ্যাপ্রচারের দ্বারা নির্মিত ভ্রান্তি বিলাস ভঙ্গেতে দক্ষ ভবতারণ বান্ধব ‘চেতনার জাগরণ'

(কৃষ্ণভক্ত শয়তানের শয়তান বলিয়া জানিবেন)

(নূতন প্রজন্মের নবাগত পথিকগণ কোন ছেলেভোলানো মিথ্যাছলনা ময় কথায় মানবে না, তাঁরা প্রত্যেক

বক্তব্যের বিজ্ঞান ভিত্তিক উত্তর চায়, পারবেন কি উত্তর দিতে?)

কঠোপনিষদ্ প্রমানে দেখা যায় যে,-- 

শ্রবণায়াপি বহুভিযো ন লভ্যঃ শৃণ্বত্তোহপিবহবো যং ন বিদুঃ। 

আশ্চৰ্য্যো অস্য বক্তা কুশলোহস্য লব্ধাশ্চর্য্য্যো জ্ঞাতা কুশলানুশিষ্ঠঃ।। 

অর্থাৎ এই শ্রেয়ের কথা শুনবার যোগ্য লোক বহু পাওয়া যায় না। দু-চার জন মাত্র পাওয়া গেলেও সেকথা শুনে অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেন না। আর শ্রেয়ো বিষয়ের তত্ত্ববিদ্ নিপুণ বক্তা অতীব দুর্লভ। আবার যদিও এরকম সুদুর্লভ উপদেষ্টা কদাচিৎ অবতীর্ণ হয়, কিন্তু আচার্য্যের অনুগত শ্রোতা আরো সুদুর্লভ। 

জগতেরলোক অবিদ্যার সাগরে হাবুডুবু খেয়ে নিজেদের বড় পণ্ডিত, খুব সমজদার (বা বুঝদার) মনে করে। আসলে তারা কপটায় আচ্ছন্ন হয়ে কেবল সংসারে ওঠা-নামা করছে। এরা সবাই অন্ধের দ্বারা পরিচালিত অন্ধের মতনই খানা-ডোবায় পড়ে মরছে--যথা কঠোউপনিষদ্ বাক্য-- 

অবিদ্যায়মন্তরে বর্তমানাঃ স্বয়ং ধীরাঃ পণ্ডিতন্মন্যমানাঃ। 

দন্দ্রম্যমাণাঃ পরিযন্তি মূঢ়া অন্ধে নৈব নীয়মানা যথান্ধাঃ।। 

গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্ৰীশ্ৰীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ জানিয়েছেন যে,-“সত্য বস্তুর প্রকৃত আলোচনাকে আমরা অনেক সময় অ প্রাসঙ্গিক মনে করি, আমরা ধরতে পারি না বলে অথবা আমি অন্যমনস্ক বলে, আমি মতলবী বলে, আমি ইন্দ্রিয় পরায়ণ বলে আচার্য্যের সত্য কথা (অর্থাৎ পরমসত্য প্রবচন) কখনও অপ্রাসঙ্গিক নয়-হতে পরে না।” তিনি পুনরায় বলেন যে,--“আমরা তৃণাদপি সুনীচ হয়ে সকলকেই এটাই জানাবো যে, বিকৃত প্রতিফলিত রাজ্যের আংশিক স্বতন্ত্রাধিকারের চেয়ে অপ্রকৃত বাস্তব সত্যের প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরতাই স্বাধীনতার সর্ব্বোত্তম মূর্ত্তি। আমরা সকলের কাছে সেই স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীণ করবো। শ্রীল প্রভুপাদের উপদেশামৃতে দেখা যায়-- 

সাধু কি করেন? উঃ সাধুগণের কর্তব্য হচ্ছে জীবের যে সকল সঞ্চিত দুষ্ট বুদ্ধি আছে, তা ছেদন করে দেওয়া। সধু মানেই হচ্ছে-তিনি একটা খড়গ হাতে নিয়ে যুবকাষ্ঠের নিকট দণ্ডায় মান রয়েছেন, মানুষের ছাগের ন্যায় যে বাসনা, সেই বাসনাকে বলি দিবার জন্য বাক্যাস্ত্ররূপ তীক্ষ্ণ খড়গের দ্বারা। সাধু কারও তোষামোদ করেন না। সাধু যদি আমার তোষামোদে হন, তা হলে তিনি আমার অমঙ্গলকারী আমার শত্রু। বৈষ্ণবগণের অসৎ সঙ্গ করবার প্রবৃত্তি নাই, তবে অসৎ সঙ্গিগণের মঙ্গলের জন্য বৈষ্ণবগণ বাক্যাস্ত্র দ্বারা অসৎসঙ্গী দিগের অসৎ-প্রবৃত্তি পরিহার করাইয়া তা দিগকে সৎসঙ্গে আনয়ন করেন। 

আমরা যদি নিষ্পকপটে গুরুপাদপদ্ম আশ্রয় করি, তাহলে ভগবৎ সাক্ষাৎ কার এই জন্মেই হবে । 

 
 
 

Comments


WhatsApp Image 2025-04-24 at 09.04_edite
  • Instagram
  • Facebook
  • Youtube
  • Whatsapp
  • Telegram
  • Dribbble
  • TikTok
WhatsApp Image 2025-04-24 at 09.05_edite

@২০২৪ চেতনার জাগরণ - এর দ্বারা

bottom of page